ভারতীয় উপমহাদেশ 'পৃথিবীর ক্ষুদ্র সংস্করণ'
Indian Subcontinent is the Miniaturisation of World
ভারত এবং প্রতিবেশী ছোটো দেশগুলিকে একত্রে ভারতীয় উপমহাদেশ বলা হয়। এই বিশাল ভৌগলিক ক্ষেত্র বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। ভৌগলিক, পরিবেশ, জনগোষ্ঠী সমস্ত দিক থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ যেন 'পৃথিবীর ক্ষুদ্র সংস্করণ’। বেশ কয়েক কিছু কারণের জন্য ভারতীয় উপমহাদেশকে 'পৃথিবীর ক্ষুদ্র সংস্করণ’ বা 'বিশ্বের সারাংশ’ বলা হয় –
ভারতীয় উপমহাদেশ (image source: Reddit) |
বিশালতা: ইরানের সীমান্ত থেকে থাইল্যান্ডের মধ্যে অবস্থিত বৃহৎ ভৌগলিক ক্ষেত্র আয়তনে একটি ছোটো মহাদেশের মতো। এশিয়ার দক্ষিণ অংশে ভারতকে কেন্দ্র করে অবস্থিত এই সুবিশাল অংশকে ভারতীয় উপমহাদেশ বলা হয়। যাকে ভাবা যেতে পারে পৃথিবীতে মানুষের বসবাসযোগ্য ক্ষুদ্রতম মহাদেশ হিসেবে।
ভূপ্রকৃতিক বৈচিত্র্য: ভারতে পৃথিবীর সমস্ত ভূপ্রকৃতিক গঠন রয়েছে। হিম শীতল হিমবাহ, সুদীর্ঘ হিমালয় পর্বতমালা, সুউচ্চ গিরিশৃঙ্গ, উষ্ণ প্রস্রবণ, বিস্তৃত সমতল ভূমি, দাক্ষিণাত্যের মালভূমি, থর মরুভূমি, দীর্ঘ সমুদ্র উপকূল – সবই রয়েছে যা ভারতীয় উপমহাদেশকে ভূপ্রকৃতিগত পূর্ণতা দিয়েছে।
আবহাওয়াগত বৈচিত্র্য: মৌসুমী জলবায়ু প্রধান হলেও ভারতীয় উপমহাদেশে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত আবহাওয়া পরিলক্ষিত হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলের তীব্র উত্তাপ, নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া, শীতল আবহাওয়া সবই রয়েছে। রয়েছে বৃষ্টিহীন শুষ্ক থর মরুভূমি, আবার রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বর্ষণমুখর অঞ্চল মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির মৌসিনরাম।
Weather in south Asia (image source: Pinterest) |
জীবগত বৈচিত্র্য: ভারতীয় উপমহাদেশ জীব বৈচিত্র্য পূর্ণ। এখানে চারটি হটস্পট রয়েছে। যা ভারতীয় উপমহাদেশকে বিশ্বে স্থানীয় প্রজাতি ও জীব বৈচিত্র্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়েছে।
Hotspots in world map (image source: Wikipedia) |
মিশ্র জনগোষ্ঠী: পৃথিবীর প্রায় সকল জনগোষ্ঠী, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মানুষ ভারতে বসবাস করে। দ্রাবিড়, গ্ৰিক, পারসিক, পল্লব, শক্, হুন, কুষাণ এই সকল গোষ্ঠীর মানুষেরা দীর্ঘ কাল ধরে ভারতে রয়েছে। এর ফলে ভারতে মিশ্র জনগোষ্ঠী সৃষ্টি হয়েছে। এই রকম বৈচিত্র্য এবং ঐক্য পৃথিবীর অন্য কোথায় খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য: ভারতে বসবাসকারী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর অনেকেরই নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে মিশ্র সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে। ভারতে প্রায় দুই শতাধিক ভাষা, প্রায় ছয়শো উপভাষা রয়েছে। স্থানভেদে খাদ্যাভ্যাস, পোশাকের পার্থক্য দেখা যায়। যা ভারতীয় সমাজকে বৈচিত্রপূর্ণ করে তুলেছে।
ধর্মমত: ভারতে সমস্ত ধর্মের মানুষ বসবাস করে। কেউ মূর্তি পূজা করে, কেউ নিরাকার ঈশ্বরের উপাসনা, কেউ কেউ একাধিক দেবতার প্রার্থণা করে, আবার কেউ কেউ একেশ্বরবাদী, আবার রয়েছে প্রকৃতির উপাসনা করা মানুষ, তেমনি রয়েছে ঈশ্বরে অবিশ্বাসী মানুষ। ভারতে আরবের ইসলাম, ইউরোপের খ্রীস্ট ধর্ম এসেছিল; ভারতে তৈরি হয়েছিল বৌদ্ধ ধম্ম, জৈন ধর্ম, হিন্দু ধর্ম।
গৌতম বুদ্ধ (image source: Wikipedia) |
কাল্পনিক ঈশ্বরে বিশ্বাসী ইসলাম, খ্রীস্ট ধর্ম, হিন্দু ধর্ম যেমন ভারতে রয়েছে ঠিক তার বিপরীতে রয়েছে যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ঈশ্বরহীন, নাস্তিক্যবাদী ভারতের মূল সম্যক সংস্কৃতির বৌদ্ধ ধম্ম, জৈন ধর্ম; রয়েছে নাস্তিক্যবাদী সাংখ্য দর্শন; রয়েছে জড়বাদী, যুক্তিবাদী নাস্তিক চিন্তাধারার চার্বাক দর্শন, বৈশেষিক দর্শন। এতোগুলো ধর্ম ও দর্শন পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
ভারতীয় উপমহাদেশে এমন বৈচিত্র্য ও ঐক্যের জন্য বলা হয় 'বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান'। এমন বিশালতা, বৈচিত্র্য ও ঐক্যের জন্য ভারতীয় উপমহাদেশকে ‘পৃথিবীর ক্ষুদ্র সংস্করণ’ বা ‘বিশ্বের সারাংশ’ রূপে আখ্যায়িত করা হয়।
[আরও পড়ুন: পুরোনো বইয়ের গন্ধ কীভাবে হয়?]